
রাজীব শেখঃ ২৪ বছরের তরুণ সাবিকুল ইসলামকে আমি চিনি না। কিন্তু অন্যের জীবন বাঁচাতে তিনি যেভাবে নিজের জীবন দিলেন সে কারণেই অচেনা এই তরুণকে আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
ঘটনাস্থল কিশোরগঞ্জের অস্টগ্রাম। ১০ জুলাই সোমবার বিকেলে অষ্টগ্রামের কলমা ইউনিয়ন থেকে নৌকায় করে একই পরিবারের সাতজন ছোট্ট একটা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে বাজিতপুরে নিজেদের গ্রামে ফিরছিলেন। নৌকায় ছিল একটি গাভীও। নৌকাটি অষ্টগ্রামের অল ওয়েদার রোডের ভাতশালা সেতুর নীচে প্রবল স্রোতে যাত্রীসহ উল্টে যায়। অনেকেই ঘটনার ভিডিও করছিলেন। কেউ কেউ ছবি তুলছিলেন। ব্যতিক্রম শুধু সাবিকুল যিনি
ঘটনার সময় মিঠামইন থেকে বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে সেতুর উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। আর এখানেই তিনি মানবতার পরিচয় দিয়েছেন।
পুলিশ ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চোখের সামনে নৌকাডুবির ঘটনাটি দেখে আর দশজন মানুষের মতো দর্শকের ভূমিকা পালন না করে বন্ধুদের কাছে মোবাইল ফোন রেখে ডুবন্ত মানুষগুলোকে উদ্ধারে হাওরে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাবিকুল। প্রাণপণ চেষ্টায় প্রথমে নৌকায় থাকা সাত বছরের মেয়ে নিপুসহ দুটি শিশুকে পানির নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার করে পাড়ে তুলে আনেন। ক্লান্ত শরীর নিয়ে তৃতীয় আরেকজনকে উদ্ধার করতে গিয়ে প্রবল স্রোতের ঘূর্ণিপাকে তলিয়ে যান। খবর পেয়ে অষ্টগ্রাম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। আফসোস সাবিকুলকে উদ্ধার করতে কেউ নামেনি।
অষ্টগ্রাম থানার ওসি মোহাম্মদ মোর্শেদ জামান জানান, খবর পেয়ে বাজিতপুরের ফায়ার সার্ভিস বাহিনীর ডুবুরিদলের প্রায় ছয় ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে সাবিকুলের লাশ উদ্ধার করে আনে। মঙ্গলবার সকালে নামাজে জানাজা শেষে নিজ গ্রাম বরাগীরবান্দি কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে।
সাবিকুল হেমন্তকালে ইজিবাইক ও বর্ষায় নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। নিজের বাড়ি নেই। বলতে গেলে দরিদ্র। কিন্তু ভীষণ সৎ, সাহসী ও মানবিক। এর আগেও আদমপুর বাজারে আগুন লাগলে সাবিকুল আগুন নেভাতে সবার আগে ছুটে গেছেন। নিজের কথা ভাবতেন না।
সাকিবুলের জন্য শ্রদ্ধা কাজ করছে। আফসোস লাগছে এমন একটা ছেলেকে বাঁচানো গেলে না। কষ্ট লাগছে তাঁর তিন বছরের ছেলের জন্য যার নাম সায়মন। স্ত্রী পরশমণি আক্তার (২০) আবারো সন্তান সম্ভবা। সাবিকুলের মা নূরজাহান বেগম ছেলেকে অকালে হারিয়ে পাগলপ্রায়। তিনি কেবলই কাঁদছেন। মাঝে মাঝে জ্ঞান হারাচ্ছেন। বলছেন, ‘এইডা কী হইল। আমার সাবিকুল কই গেল’!
জানি না সাকিবুলের পরিবাটির কী হবে! মানুষের প্রতি যে ভালোবাসা তিনি দেখিয়েছেন সেই ভালোবাসা আমরা কী সাকিবুলের পরিবারের প্রতি দেখাতে পারবো? স্থানীয় প্রশাসন, সাধারণ মানুষ কিংবা স্বচ্ছল মানুষেরা কী সাকিবুলের পরিবারটিকে দেখবেন? আমার জানা নেই। তবে এই যে বাংলাদেশ টিকে আছে, মানবতা টিকে আছে সেটি সাকিবুলদের জন্য যারা নিজের বিপদ জেনেও অন্যের জন্য ঝুঁকি নেন, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান। এমন মানুষের পাশে আমাদের সবার দাঁড়ানো উচিত। আমি ওই এলাকায় বা আশেপাশে থাকা চেনা পরিচিতজনদের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করছি। আমি সঙ্গে আছি। সাকিবুলের জন্য অনেক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুন। স্যালুট সাকিবুল!