

গোদাগাড়ীতে রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোয়ার বাইরে, আটক হচ্ছে চুনো পুঠিরা!
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে মাদক কারবারের সাথে জড়িত রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোয়ার বাইরে খেকেই তাদের নিত্যদিতে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। ধরা পড়ছে চুনো পুঠিরা। এমনই অভিযোগ ওঠেছে।
সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীর তালিকাভুক্ত ১৯৮ জন মাদক ব্যবসায়ী বীর দাপটে চলাচলা করলেও রহস্যজনক কারণে তাদের অধিকাংশই ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পথগুলো দিয়ে ব্যাপকহারে দেশে অনুপ্রবেশ করছে হেরোইন, ফেনসিডিল, দামি মদসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। ফলে ধ্বংসের দারপ্রান্তে যুব সমাজ। প্রতিদিনই এসব মাদকদ্রব্য মাদক চোরাকারবারিরা ভারত থেকে চোরাই পথে এনে মাদক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুরো রাজশাহীর চাহিদা পূরুণ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে দেশের ভবিষ্যত প্রজম্ন ছাত্র সমাজ, যুব সমাজ, উঠতি বয়সি যুবতী, কিশোর, কিশোরী থেকে শুরু করে মাদকের ভয়ঙ্কর ছোবল থেকে রেহাই পাচ্ছেনা কোন শ্রেণীর মানুষ।
নেশার টাকা যোগাড় করতে চুরি, ছিনতাই, ব্ল্যকমেইল, প্রতারতা সহ সমাজে ধর্ষণ ও খুনের মতো জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার যুবক ও কিশোররা। ফলে মাদকের লাগাম টেনে ধরার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সমাজের বিশিষ্ট জনেরা।
তারা বলেন, বিভিন্ন সভা সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বক্তেব্যে বলেন, সমাজ থেকে মাদক নিমূল করা একবারেই সম্ভব নয়। তবে নিয়ন্ত্রণ করতে কাছ করছে প্রশাসন। বাস্তবে পাড়া মহল্লার দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা হবে মাদক নিয়ন্ত্রনের বাইরেই চলে গেছে। ডিবি পুলিশ ও র্যাব সদশ্যরা অভিযান পরিচালনা করে মাদক যতটুকু আটক করে তাই ঢের।
মাদক পাচারের সব চেয়ে নিরাপদ রুটগুলো হলো গোদগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়া দহ, মানিকচক, কানাপাড়া, চাঁপাইনবাবগজ্ঞ সদর উপজেলার কোদালকাটি, আলাতুলি, ঝাইলাপাড়া, ক্লাবঘাট প্রভৃতি এলাকা। ভারত থেকে হেরোইন, ফেনসিডিল, মদসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য পাচার করে নিয়ে আসে নিজ বাড়ীতে কিংবা টাকার বিনিময়ে অন্যের বাড়ীতে রাখেন, সে গুলো কোন স্কুল, কলেজ, মাদ্রসা পড়–য়া ছাত্রছাত্রী, গরুর রাখাল, সুন্দরী কিশোরী, গৃহবধূর মাধ্যমে পদ্মা নদীর এপারে গোদাগাড়ী পৌরসভার সিএন্ডবি, গড়ের মাঠ, মাদারপুর, হাটপাড়া, রেলওয়ে বাজার, কুঠিপাড়া, শিবসাগর, বারুইপাড়া প্রভৃতি এলাকার বাসাবাড়ীতে রেখে রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, চিটাগাং, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়ে থাকে। মাদকদ্রব্য পাচার, ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত রয়েছে শত শত নানা ধরনের মানুষ। মাদকদ্রব্য ও চোরাচালানি পণ্য পাচার ক্রয়-বিক্রয় তাদের একমাত্র পেশা। বেসরকারী এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত ২৫ বছরে গোদাগাড়ী উপজেলাসহ পৌরসভা এলাকার ৫ শতাধিক ব্যক্তি মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন এবং লাখপতি হয়েছেন কয়েক হাজার। তাদের অবস্থান এখন সমাজের শীর্ষে স্থানে। কেউ কেউ কালো টাকার ছড়াছড়ি করে নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে হয়েছেন চেয়ারম্যান, মেয়র, মেম্বার, কাউন্সিলার, রাজনৈতিক দলের তথাকথিত প্রভাবশালী নেতা, কথিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। সংগত কারণে তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাদকদ্রব্য সেবন করে অকালে মারা গেছে, শাতাধিক মাদকসেবী। আর মৃত্যুর প্রহর গুনছেন হাজার হাজার মাদকসেবী। লন্ডভন্ড বিকৃতি মানুষিকতা নিয়ে গড়ে উঠছে মাদকাশক্ত, কিশোর, কিশোরী, যুবক, যুবতী। এদের মধ্যে না থাকছে আদর্শ নিতী নৈতিকতা, না থাকছে আবেগ বিবেক। কোন কথা নাই যে কোন মূল্যে টাকা চাই। আর এজন্য মা, বাবা, ভাই, বোন কেউ তাদের নির্যাতের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এই সব চোরকারবারীর গডফাদারেরা নিয়োগ করেছেন শত শত এজেন্ট। উপজেলার খেয়াঘাট ছাড়াও তারা ব্যবহার করছেন প্রাইভেট নৌকা, কার, মাইক্রো হোন্ডা, মোবাইল ফোন, ভারতীয় সিম এবং তাদের ভারতীয় এজেন্টদের নিকট রয়েছে বাংলাদেশী সিম যাতে সহজে অল্প খরচে সহজে কথা বলা যায়। ওই সব মাদক চোরা কারবারীর গডফাদারেরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মোবাইল সিম ব্যবহার করে থাকেন। অনেক সময় বিজিবি চঁঁাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা সীমান্তবর্তী আলাতুলি, কোদলকাটি এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সীমান্ত ডি.এম.সি চর আষাড়িয়াদহ প্রভৃতি এলাকায় কেজি কেজি হেরোইন, হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল আসামিসহ আটক করেন থানায় মাদক আইনে মামলা দেন। ওই সব মাদক সম্্রাটদের মাদকের মালিক হিসেবে আসামি করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মাদক বহনকারি লেবারদের সাজা হয়। গড ফাদাররা খালাস পায়। পরে গডফাদাররা উচ্চ আদালতে গিয়ে লেবারের জামিনে মুক্তি করায়। এক সময় খালাসও হয় তারা। মাদক ব্যবসায়ীরা সব সময় অসৎ জনপ্রতিনিধি, অসৎ রাজনৈতিক নেতা, পাতিনেতাদের হাত করে চালার চেষ্টা করে। প্রশাসনের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করতে অনেক সময় নিজেকে ক্ষমতাশীন দলের লোক, বিভিন্ন মহলে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেন। গোদাগাড়ী পৌরসভা ও উপজেলায় ভাল ভাল জায়গায় আলাতুলি, কোদালকাটি, চর আষাড়িয়াদহ এলাকার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা মাটি কিনে রাজকীয় বাড়ী তৈরি করেছেন এবং প্রধান প্রধান বাজারে দোকান কিনে কথিত মোবাইল দোকান, গার্মেন্টস্, জুতা স্যান্ডেলের দোকান করেছেন। কিন্তু ওই সব দোকানে মূলত মালিক কোন সময় আসেন না। অন্য লোক দিয়ে সারা বছর চালানো হয়। ওই সব কথিত দোকান ও বাড়ীর আড়ালে চালানো মাদক ব্যবসা। আবার অনেকেই সুখি নগরী হিসেবে খ্যাত রাজশাহী মহানগরীতে দামি বিল্ডিং, নজরকাড়া শোরুম, এসি চেম্বার নিয়ে আয়েশি জিবন যাপন করছেন। নেপথ্যে কোটি কোটি টাকার মাদকের চালান পাচার করাচ্ছেন লোক দিয়ে।
একাধিক স্থানীয়রা জানান, এসকল চোরাচালানী, মাদক সম্্রাটরেরা দেশ, জাতি, সমাজের শত্রু। এদের বয়ঙ্কর থাবা থেকে দেশ ও দেশের ভবিষ্যত প্রজম্ন যুবসমাজ বাঁচাতে হলে যে কোন মূল্যে মাদক চোরাকারবার বন্ধ করতে হবে।
জানতে চাইলে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যত কারবারীরা শক্তিশালী হউক না কেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।