
নতুন মাত্রা ডেস্ক : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নতুন ভবনের কেন্টিলিভার (পার্কিং শেড) নির্মাণে সাটারিংয়ের জন্য ব্যবহার করছে বাঁশের খুঁটি। বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করায় আগেই দুর্ঘটনার শঙ্কা প্রকাশ করেন ঢালাইয়ের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সেদিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান নির্মাণ শ্রমিক মো. রোকন ও মো. হানিফ।
তারা বলেন, মাটি থেকে ২০ ফুট ওপরে ছাদ ঢালাইয়ের সাটারিং বাঁশের খুঁটি দিয়ে হয় না। আমরা যখন কাজ করতে উঠছিলাম, তখনই আমাদের ভয় লাগছিল। বিষয়টি আমাদের মাঝি (যিনি শ্রমিকদের তদারিক করেন) জালালকে জানিয়েছিলাম। মাঝিকে জানানোর আধাঘণ্টা পরই ছাদ ধসে পড়ে। তারা আমাদের কথা শোনেনি। সাটারিংয়ের দুর্বলতা ছিল। ছাদধসে রোকন বুকে ও পায়ে আঘাত পান। এ ছাড়া হানিফের পা ভেঙে গেছে। চোখেও আঘাত পান তিনি। হাসপাতালের চিকিৎসা নেওয়া মো. সোহেল জানান, ঢালাইয়ের একপর্যায়ে বাঁশের খুঁটি ছাদের লোড নিতে পারেনি। এ সময় হঠাৎ করেই ছাদ ধসে পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী প্রশান্ত কুমার হালদার বলেন, ঘটনার দিন আমি পূজার ছুটিতে ছিলাম। এখানে দায়িত্বে ছিল পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী জিকো দেওয়ানের। ছাদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ছিল ২৮ ফুট বাই ২৮ ফুট। দুর্ঘটনা তো যে কোনো কারণেই হতে পারে। বাঁশের খুঁটি না দিয়ে লোহার পাইপ দিলেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। তবে সাটারিংয়ের ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া ছাদটি মাটি থেকে অতন্ত ২০ ফুট উঁচু ছিল।
তিনি জানান, শেড নির্মাণের জন্য এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা নামে এক ঠিকাদার কাজ পেলেও, কাজটি বাস্তবায়ন করছিলেন প্রণত মিত্র চৌধুরী নামে এক উপঠিকাদার। পার্কিং শেড ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের জন্য নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি টাকার বেশি। নির্মাণকাজের ঠিকাদার এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, শেড নির্মাণের কাজটি আমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে উপঠিকাদার হিসেবে বাস্তবায়ন করছিলেন চট্টগ্রামের ঠিকাদার প্রণত মিত্র চৌধুরী।
ঠিকাদার প্রণত মিত্র চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে তাকে হোয়াটসআপে করা টেক্সড সিন করলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। ঘটনার তদন্তে পৃথক দুটি কমিটি করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আমিনুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক কতৃর্ক মনোনীত প্রতিনিধি, পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান কর্তৃক একজন নির্বাহী প্রকৌশলী, কমিটির সদস্য সচিব হলেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আশীষ কুমার সাহা।
৯ অক্টোবর গঠিত হওয়া কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। অন্যদিকে ছাদ ধসে দুই শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পার্বত্য জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী জানান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সম্প্রসারিত ভবনের কেন্টিলিভার (পার্কিং শেড) নির্মাণের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন ও দায়দায়িত্ব নিরুপণের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
জেলা পরিষদের সদস্য কল্যাণ মিত্র বড়ুয়াকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন— স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী এবং খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগ নির্বাহী প্রকৌশলী। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে নিহতদের এক লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবে জেলা পরিষদ।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, নির্মাণজনিত ত্রুটির কারণে এমনটি হয়েছে। কারও গাফিলতি ছিল কিনা তাও বের করা হবে। মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি হয়েছে। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দায়ীদের খুঁজে বের করা হবে। উল্লেখ্য, শনিবার বিকালে জেলা পরিষদের সম্প্রসারিত ভবনের ছাদ ধসে সাজ্জাদ হোসেন ও সাইফুল ইসলাম নামে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরও ৫ শ্রমিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।