
নাটোর প্রতিনিধি : সিংড়ার সুকাশ ইউনিয়নের বামিহাল বাজারে দুপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আত্তাব হোসেন (৫০) ও স্থানীয় রুটি দোকানি রুহুল আমিন (৪৫) নিহত হয়েছেন। নিহত আত্তাব হোসেন সুকাশ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য পদে দুবার নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন।তিনি বামিহাল গ্রামের গাজীউর রহমানের ছেলে। অপরজন নিহত রুহুল আমিন বামিহাল গ্রামের শাজাহান আলীর ছেলে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টায় বামিহাল বাজারে পূর্ব বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে এ ঘটনায় সুকাশ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ দুপক্ষের আরও তিনজন আহত হয়েছেন। যুবলীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ (৪০) ও প্রতিপক্ষের মাসুদ (৩৮) -কে গুরুতর আহতাবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপর আহত আফসার আলীকে (৫৫) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বামিহাল বাজারে দুই প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে থানাসূত্রে জানা গেছে।
সিংড়া থানার ওসি মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এখন পর্যন্ত দুপক্ষের দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে বর্তমানে পরিবেশ শান্ত রয়েছে। আর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বামিহাল গ্রামের আ.লীগ নেতা আত্তাব হোসেনের সঙ্গে সুকাশ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আব্দুল কুদ্দস ও তার বড় ভাই সুকাশ ইউনিয়ন আ.লীগের সহসভাপতি ইউপি সদস্য ফরিদ উদ্দিনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।
রোববার বিকেল থেকে দুপক্ষের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে রাতে বামিহাল বাজারে নিহত আ’লীগ নেতা আত্তাব হোসেনের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় বিএনপি নেতা আব্দুল কুদ্দুস ও তার বাহিনী। পরে দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে আত্তাব হোসেনসহ তার পক্ষের তিনজন ও আব্দুল কুদ্দসের পক্ষের দুজন গুরুতর জখম হয়। পরে ঘটনাস্থলেই আ’লীগ নেতা আত্তাব হোসেনের মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে প্রতিপক্ষ গ্রুপের রুহুল আমিন আজ সোমবার সকালে রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মাহফুজা আক্তার মৌসুমী বলেন, আহতরা সবাই ধারালো অস্ত্রের আঘাত পেয়েছেন। তবে কারও শরীরে কোনো গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, নিহত আ.লীগ নেতা ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। তার শরীরে পর্যাপ্ত ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে ও পায়ের রগ কাটা পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সুকাশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন মোফা বলেন, বামিহালে সুকাশ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আব্দুল কুদ্দুসের নেতৃত্বে তার বাহিনী যুবলীগ নেতা আবুল কালাম আজাদকে কুপিয়ে গুরুতর জখম ও আ’লীগ নেতা আত্তাব হোসেনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। এ বাহিনীর অত্যাচারে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। তিনি দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে প্রতিপক্ষ সুকাশ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আব্দুল কুদ্দসের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তার বড় ভাই সুকাশ ইউনিয়ন আ.লীগের সহসভাপতি ইউপি সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, গুলির শব্দ শুনে বাসা থেকে বের হইনি। রুহুল আমিন ও মাসুদ নামে দুজনকে কুপিয়ে জখমের খবর শুনেছি। রুহুল ও মুছা নামে আমার দুজন কর্মীর বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বিগত কয়েক বছরে ওই এলাকায় উভয় গ্রুপের দ্বন্দ্বে বেশ কয়েকটি হত্যাসহ ১২ থেকে ১৪ জন পঙ্গু ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে সূত্রে জানা গেছে।