

ভেজাল গুড় তৈরী কারখানার সন্ধান, মুল হোতা যারা
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর মোহনপুরে ভেজাল গুড় তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে আখ ছাড়াই তৈরী হচ্ছে ভেজাল গুড়। গুড় তৈরীর কারখানাটি পরিচালনা করছেন উপজেলা যুবলীগ সদস্য কাজি রিপন ও বাকশিমইল ইউপি ৭নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা (২২ অক্টোবর) শনিবার দিবাগত রাত ১১ টার পর উপজেলার বাকশিমইল ইউপি’র কৃষ্ণপুর গ্রামে দেখতে পান পুকুর চাষের আড়ালে আখ ছাড়াই তৈরী হচ্ছে গুড়। এর আগে গত ২০ অক্টোবর ধোপাঘাটা বাজারে অভিযান চালায় বিএসটিআই। সেখানে কাউকে না পাওয়ায় ভেজাল গুড় তৈরি কিছু নমুনা সংগ্রহ করে। বিএসটিআই ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানের খবর পেয়ে আগেই সটকে পড়েন কারখানা মালিকসহ সবাই। ব্যবসাকে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে পরিচালনা করতে কারখানাটি নির্জনে বিলের মাঝে তৈরী একটি টিনসেড স্থাপনায় নিয়ে আসেন। ভেজালগুড় প্রস্তুতের সময় ঘটনাস্থলে স্থানীয় সাংবাদিকরা পৌঁছে কারখানাটির পূর্ণাঙ্গ চিত্র ধারণ করে জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় মোহনপুর উপজেলা প্রশাসনকে জানান। মোহনপুর থানা পুলিশের ওসি মোহাঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত ছাড়া সেখানে অভিযান পরিচালনা করা যাবেনা বলে তাদের অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা ফাতেমাতুজ-জোহ্ রা কে জানালে তিনি বলেন বিষয়টি আমি দেখছি। পরে তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। পরের দিন ২৩ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভেজাল গুড় উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহন পরিলক্ষিত হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষ্ণপুর গ্রামের আজিজুল কাজি বাড়ির পেছনের দক্ষিনে ধান ক্ষেতের ওপারে যাবার পর পুকুরের ধার বেয়ে সামনে এগুতেই টিনসেড ছাউনির ভেতরে হাতেগোনা কয়েকজন লোক আখ ছাড়াই তৈরী করছেন গুড়। ক্যামেরা অন করে ছবি তুলতে দেখে এগিয়ে আসেন উপজেলা যুবলীগ সদস্য কাজি রিপন আলী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভূমি দস্যু আশরাফুল ইসলাম। তারা বলেন আপনারা ছবি তোলা বন্ধ করেন এটা আমাদের কারখানা। আমরা পুঠিয়া থেকে কারিগর এনে গুড় তৈরী করছি আপনারা আমাদের সাহায্য করলে কারখানাটি চালাবো না হলে বন্ধ করে দিব। সেখানে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা দেখতে পায় দুটি বড় বড় চারকোনা স্টিলের পাতিলে তৈরী হচ্ছে গুড়।

ভেজাল গুড় তৈরী কারখানার সন্ধান, মুল হোতা যারা
গুড় তৈরীর উপকরণগুলি দেখা গেছে তা হলো বস্তা চিনি, বস্তা ময়দা, ড্রাম ভর্তি লালি, ফিটকিরি ও ডালডা। এবিষয়ে কাজি রিপন বলেন, আমরা আজকে গরুর খাদ্য হিসেবে গুড়গুলি তৈরী করছি। এরআগে স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালিয়েও আমাদের কিছু করতে পারিনি। আগের কারখানায় মানুষের জন্য খাওয়ার গুড় তৈরী করতাম। এখানে গরুর জন্য গুড় তৈরী করছি এটা শেষ করে মানুষের জন্য গুড় তৈরী শুরু করবো। এ ব্যবসা করতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গাকে ম্যানেজ করতে আমাদের অনেক টাকা চলে গেছে। তা ছাড়াও বাইরে থেকে কারিগর আনাতে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। গুড়গুড়ি কালকে উপজেলার বিভিন্ন হাটে বিক্রি করবো। তাদের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাই আপনারা এভাবে জনস্বাস্থ্য ও পশুসম্পদের এমন ক্ষতি করছেন এটা কি ঠিক করছেন? তখন তারা বলেন আগে ক্যামেরা বন্ধ করুন তারপর বলবো। ঠিক আছে ক্যামেরা বন্ধ করলাম। তখন বলেন এ দুনিয়ায় কে কদিন বাঁচবে আপনারা বলতে পারেন। তাই যে উপায়ে হোক টাকা আসা দরকার। কে মরলো আর কে বাচলো এটা দেখার সময় নাই! পরদিন রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে অফিসে গেলে তিনি না থাকায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আব্দুস সালাম বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে যারায় অপকর্মে জড়াবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। পাশাপাশি তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অনুরোধ করেন তারা যেন দ্রুত ভেজাল গুড় উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধ আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করেন।