Home » যে ছবি নাড়িয়ে দিয়েছিল দস্তয়েভস্কিকে

যে ছবি নাড়িয়ে দিয়েছিল দস্তয়েভস্কিকে

by নিউজ ডেস্ক
views

হান্স হোলবাইন দ্য ইয়াঙ্গারের আঁকা ‘কবরের ভেতর মৃত খ্রিষ্ট’। ছবিটি প্রভাবিত করেছিল দস্তয়েভস্কিকে

মিতব্যয়িতার অপবাদ রুশ সাহিত্যিক ফিওদর দস্তয়েভস্কিকে তাঁর পরম শত্রুও দিতে পারবে না। লেখালেখি করে টাকাপয়সা একদম কম কামাননি, কিন্তু এর প্রায় সবটাই উড়িয়ে ফেলতেন জুয়ায়। তারপর দেখা যেত, সারা মাস তাঁর চলা লাগছে ধারদেনা করে চলছে।

তো এ রকমই এক ঋণগ্রস্ত মৌসুমে ১৮৬৭ সালের আগস্টে দস্তয়েভস্কি তাঁর নতুন স্ত্রী অ্যানাকে নিয়ে ঘুরতে চলে গেলেন জেনেভায়। উদ্দেশ্য যতটা না মধুচন্দ্রিমা, তার চেয়ে বেশি পাওনাদারদের হাত থেকে বাঁচা। পথিমধ্যে এই নবদম্পতি বাসেলে থামলেন ওখানকার জাদুঘর দেখার জন্য। এমনিতে এসব জাদুঘরের প্রতি দস্তয়েভস্কির খুব টান ছিল না, এগুলো খুব সচেতনভাবেই এড়িয়ে চলতেন তিনি। কিন্তু এ জাদুঘরে দস্তয়েভস্কি এসেছিলেন একটা বিশেষ ছবির আকর্ষণে

—‘কবরের ভেতর মৃত খ্রিষ্ট’, যা হান্স হোলবাইন দ্য ইয়াঙ্গারের আঁকা

এ ছবির কথা তিনি ঢের শুনেছিলেন। এরপর নিজের চোখে ছবিটা দেখার পর এই রুশ ঔপন্যাসিকের কী অবস্থা হয়েছিল, তা তাঁর স্ত্রী অ্যানার দিনপঞ্জিতে কিছুটা পাওয়া যায়। ছবিটার সামনে দাঁড়িয়ে দস্তয়েভস্কি নাকি স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিলেন, যাকে বলে পুরোপুরি নিশ্চল। থরথর করে কাঁপছিল তাঁর মুখ। দস্তয়েভস্কির মৃগীরোগ ছিল, তাই অ্যানা ভেবেছিলেন বোধ হয় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিছুক্ষণ পর অবশ্য স্বাভাবিক হয়ে উঠলেন দস্তয়েভস্কি। তারপর আরেকবার গেলেন ছবিটার সামনে।

banner

তাঁর স্ত্রী অ্যানার কাছে অবশ্য এ ছবি খুব কুৎসিত মনে হয়েছিল। ছবিতে যিশুখ্রিষ্টের হাতে-পায়ে শুকানো রক্তের ক্ষত, বীভৎস নীল ঠোঁট-চিবুক-গাল, বুকের চামড়া ফেটে যেন বের হয়ে আসতে চাইছে পাঁজরের হাড়, তার পাশে ঝুলে আছে একটুখানি আলগা মাংস। নিষ্প্রাণ চোখ দুটো আধখোলা বটে, কিন্তু তা আর দেখতে পায় না কিছুই। যিশু নিথর শুয়ে আছেন। আর তাঁর লাশের সারা শরীরে পচন।

কিন্তু একজন ধর্মপরায়ণ নারী হিসেবে দস্তয়েভস্কির স্ত্রী এ দৃশ্য খুব সহজভাবে নিতে পারেননি। অপর দিকে দস্তয়েভস্কির কাছে এটাই ছিল ছবিটার অসাধারণত্ব। যিশু যদি সত্যিই মানুষের মতো হবেন, যদি মানুষের পাপের ভার নিজে নিয়ে তাঁদের জন্য মৃত্যুবরণ করবেন, তাহলে তাঁর মৃত্যুও হতে হবে মানুষেরই মতো। আর মানুষের লাশ, আমরা জানি, পচনশীল।

ছবিটা দস্তয়েভস্কিকে খুব প্রভাবিত করেছিল। তাঁর লেখা দ্য ইডিয়ট বইতে এ ছবির উল্লেখ আছে। আবার দস্তয়েভস্কির শেষ উপন্যাস দ্য ব্রাদার্স কারামাজোভ-এ এল্ডার যোশিমা, যিনি একজন খ্রিষ্টান মঠ সন্ন্যাসী, মৃত্যুর পর তাঁর দেহে পচন ধরলে পর সবাই তাঁকে ভণ্ড ভাবতে শুরু করে। কারণ, যত যা-ই হোক, একজন পবিত্র মানুষের শরীরে তো আর পচন ধরতে পারে না, তাই না?

তবে আর কেউ না জানুক, দস্তয়েভস্কি জানতেন, মানুষ কখনো পবিত্র হয় না। হলেও তাদের প্রতি দস্তয়েভস্কির আগ্রহ ছিল সামান্যই। যিশুর মতোই দস্তয়েভস্কিও ভালোবাসতেন পাপীদের, যাদের শরীর পচনশীল।

You may also like

Leave a Comment

NatunMatra Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: অভিলাস দাস তমাল

বার্তা সম্পাদক: এহেসান হাবিব তারা

উপদেষ্টা: মাসুদ রানা রাব্বানী

নিউমার্কেট পূবালী  ব্যাংকের গলি, সুলতানাবাদ, ঘোড়ামারা, রাজশাহী – ৬১০০

মোবাইল: ০১৭৭২-৩৫৯২২২, ০১৭১১-৯৫৪৬৪৭ 

মেইল: news@natunmatra24.com

Edtior's Picks

Latest Articles

Natun Matra All Right Reserved. Designed and Developed by Ecare Solutions

শিরোনাম: