মেহেদী হাসান মিরাজ, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
উচ্চমূল্যের পুষ্টিগুণ সম্পন্ন মালবেরির বাগান করছেন পঞ্চগড়, জেলার বোদা উপজেলার মাসুদ রানা। তিনি শ্যামাগাঁও গ্রামের স্কুল শিক্ষক মজিবর রহমানের ছেলে।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে ফলের বাগান করছেন। শুরুতে আম ও কমলার বাগান গড়ে তুললেও পরে এর সঙ্গে যোগ করেন মালবেরি। পরীক্ষামূলকভাবে লাগান ১৫টি চারা। সেসব চারা বড় হয়ে এখন ফল ধরেছে। গাছে পাতার চেয়ে ফলই বেশি। গাছের পাতা ডিম্বাকার, চমৎকার খাঁজযুক্ত এবং অগ্রভাগ সুচালো। ফলটি আকারে আঙুরের চেয়ে কিছুটা বড়। সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল আসে। মার্চ-এপ্রিলেই ফল পাকতে শুরু করে। তবে সারা বছরই মিলে এ ফল।
একসময় পঞ্চগড়ের পথে ঘাটে এ ফলের দেখা গেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে গাছের সংখ্যা। অনেকে এ ফলটিকে তুঁত ফল হিসেবেই চিনে। এবার ফলটি বাগানে চাষ হচ্ছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বোদায়। সবুজ গাছের ডগায় ডগায় ঝুলছে উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন মালবেরি ফল। সবুজ, লাল ও কালো রং হওয়ায় ফলটি দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। মালবেরি নামটি পরিচিত না থাকলেও গ্রাম—গঞ্জে ফলটিকে তুঁত ফল হিসেবে চিনে সবাই। তুঁত গাছের পাতা রেশম উৎপাদনের গুটি পোকার প্রিয় খাদ্য। সে হিসেবে তুঁত ফল হিসেবেই বেশি পরিচিত। তবে তুঁতের আবাদ কমে যাওয়ায় নতুন প্রজন্মের অনেকেই ফলটি চেনেন না।
মালবেরি চাষি মাসুদ রানা বলেন, আমি ৫ একর জমিতে আম ও মাল্টা আবাদ করে সফল হয়েছি। এ জমিতেই পনেরটি মালবেরি গাছ রোপণ করেছিলাম দুই বছর আগে। এটা ছিল পরীক্ষামূলক। বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ফলটি বিদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় এবং বাজারজাত করা হয়। বাজারেও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নতুন এই ফলটি আমি পরীক্ষামূলকভাবে থাইল্যান্ড, ভারত, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া ও ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আটটি জাতের ১০টি গাছ সংগ্রহ করে এই মালবেরি চাষ করেছি এবং পরীক্ষামূলকভাবে চাষে প্রতিটা গাছে ফল এসেছে।
মাসুদ রানা বলেন, এটি আবাদ করতে তেমন খরচ নেই। রোগবালাইও খুব কম। তেমন কীটনাশক লাগে না। কলম চারা লাগালে দুই থেকে চার মাসের মধ্যেই গাছে ফল ধরে। জৈব সার ব্যবহার করলে সারা বছরই ফল পাওয়া যায়। মালবেরি আমদানি নির্ভর ফল। এই ফল ঢাকা শহরে সুপার শপগুলোতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
মালবেরির আদিবাস চীনে। ভারত, বাংলাদেশ, এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে মালবেরি ফলের চাষ হয়ে থাকে। মূলত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে তুঁতের চাষ হয়। বিশেষ করে রাজশাহীতে বাংলাদেশ রেশম চাষ উন্নয়ন বোর্ড অবস্থিত হওয়ায় এখানে তুঁতের আবাদ বেশি হয়ে থাকে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মাটিতে হওয়া তুঁত ফল বেশি সুস্বাদু।
জানা যায়, শরীরকে সুস্থ ও ফিট রাখতে অনেকেই প্রাকৃতিকভাবে প্রতিকারের উপায় সন্ধান করে থাকেন। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মালবেরি বা তুঁত ফল। তুঁত ফলের মধ্যে রয়েছে ১.৪% প্রোটিন, ৯.৫% কার্বোহাইড্রেট এবং ১.৭% ফাইবার। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালবেরি ফল স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য পাকা তুঁঁত ফল উপকারী। এ ছাড়া পাকা ফলের টক—মিষ্টি রস পিত্ত, দাহ, কফ ও জ্বর নাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তুঁত গাছের ছাল ও শিকড়ের রস কৃমিনাশক। এটি ঠান্ডা লেগে জ্বর কিংবা কাশি হলে অত্যন্ত উপকারী।
সম্পাদক ও প্রকাশক: অভিলাস দাস তমাল, উপদেষ্টা: মাসুদ রানা রাব্বানী
নিউমার্কেট পূবালী ব্যাংকের গলি, সুলতানাবাদ, ঘোড়ামারা, রাজশাহী – ৬১০০
মোবাইল: ০১৭৭২-৩৫৯২২২, ০১৭১১-৯৫৪৬৪৭, মেইল: news@natunmatra24.com
Copyright © 2024 নতুন মাত্রা. All rights reserved.