এহেসান হাবীবঃ মুর্শিদা রাজশাহীর ভদ্রা জামালপুরের হতদরিদ্র চা বিক্রেতা মাজদারের বড় কন্যা। তরুনী মুশিদার বিয়ে হয় প্রতিবেশী এক প্রতিবন্ধি যুবকের সাথে, অপমৃত্যুর ৩মাস আগে পারিবারিক কারণে তালাকও হয় তাদের। তালাকের পর তরুনী মুশিদার স্মাটফোনেই আসতো তার সাবেক স্বামীর প্রতিবন্ধি ভাতা। ৭ বছরের একটা সন্তানও আছে এই দম্পতির। তবে তালাকের পর থেকে মা-বাবা ও ছেলেকে সাথে নিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো তরুনী মুর্শিদা (২৫)। হঠাৎ, গত (৮ নভেম্বর) মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে নিজ বাড়িতে সিলিং ফ্যানের হুকের সঙ্গে গলায় ওড়না দিয়ে আত্মহত্যা করে তরুনী মুর্শিদা (২৫)। সুরতহাল রির্পোটেও আত্মহত্যা ব্যাতিত কিছু পাওয়া গিয়েছিল না। তবে, ঘটনার শুরু মৃত মুর্শিদার মোবাইলকে ঘিরে। যতই দিন যায় ততই যেনো মোবাইলটি নিয়ে বাড়তে থাকে রহস্য।
মৃত তরুনীর মোবাইল ফোনটি কোথায় আছে জানে না পুলিশ। পরিবারের দাবি ঘটনার দিনই একজন পুলিশ সদস্য ফোনটি জব্দ করে। অন্যদিকে প্রশাসনের দাবি ফোনটি পুলিশের কারো কাছেই নেই।
এদিকে, ঘটনার কয়েকদিন পরই সেই ফোনটি থেকেই রাজশাহী চন্দ্রিমা থানা পুলিশের অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) ইমরানের নামে একাধিক অভিযোগ এবং ৩২ লক্ষ টাকা আদান প্রদানের একটি খুদে বার্তা বা এসএমএস প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর সহ খোদ ওসির ফোনে পাঠানো হয়। তবে আশ্চর্যের বিষয় ফোনটি কার কাছে রয়েছে এটি এখন পর্যন্ত অজানা রহস্য ঘেরা। তবে, পুলিশ এবং ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি অতি দ্রুতই ফোনসহ অপরাধীকে সনাক্ত করে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করা।
তবে এ ঘটনার দায় নিতে রাজি নয় চন্দ্রিমা থানা, পাল্টা ভূমিকায় তালাইমারি ফাঁড়ি। থানা এবং ফাঁড়ির মধ্যে চলছে বাকযুদ্ধ। এ ঘটনাকে ঘিরে নগরীর ভদ্রা চন্দ্রিমা থানা এলাকা এখন রহস্যপুরীতে পরিণত হয়েছে।
প্রথমেই জেনে আসবো ঘটনার দিনের কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৃত মুর্শিদার স্বজন বাংলার জনপদের প্রতিবেদককে বলেন, আত্মহত্যার দিন স্থানীয়রা ঘটনাটি জানতে পারলে নগরীর চন্দ্রিমা থানাধীন তালাইমারী পুলিশ ফাঁড়িতে জানায়। তাৎক্ষনিক চন্দ্রিমা থানার অফিসার্স ইনর্চাজ ইমরান, তালাইমারী ফাঁড়ীর ইনচার্জ এটিএম আশিকুল রহমান সঙ্গীয় র্ফোস নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। মৃত মুশিদার ঘর ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় তালাইমারী ফাঁড়ীর ইনচার্জ ও থানার অফিসার্স ইনর্চাজের উপস্থিতিতে ঘরের তালা ভাঙ্গেন একজন পুলিশ সদস্য। ভেতর থেকে লাশ বের করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ আলামত ও মেয়ের বাবার কছে থেকে মৃত মুর্শিদার মোবাইল জব্দ করেন।
তিনি আরো বলেন, তরুনীকে দাফনের পর তদন্ত কর্মকতার কাছে জব্দকৃত ফোন নেয়ার জন্য ফোন দেয় মৃতের স্বজনেরা। সেই সময় ফোনের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেয়া হয় নি। সেই পুলিশ কর্মকতা বলে, “ফোন হারাবে না পাওয়া যাবে। আমাদেরই কারো কাছে আছে হয়তো। তদন্ত শেষ হলে দিয়ে দিবো”। কিন্তু তার কয়েকদিন পর ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী মৃতের বাসায় মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেইদিন সকালে সিভিলে দুইজন পুলিশ পরিচয়ে আমাদের বাসায় আসে। আমাদেরকে বলে যে, আপনারা কি আপনাদের স্মাট ফোনটি ফিরে পেয়েছেন? আমরা বলি যে না আমাদেরকে কোনো ফোন ফেরত দেয়া হয়নি। সেই দুইজন পুলিশ তখন চলে যায়।
তারপর আসরের আযানের পর মিলাদ শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে বাসায় আসে চন্দ্রিমা থানার অফিসার্স ইনচার্জ ইমরান। তখন তিনি (ওসি ইমরান) আমাদের বলেন, দেখো তোমাদের ফোন থেকে আমার নামে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ নেটে ছড়ানো হচ্ছে। ওসি তখন কান্না করার মতো হয়ে পড়ে। সেই সময় আমরা আমাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাবেক কাউন্সিলর খলিল ভাইকে জানায়। তিনি এসে সংক্ষেপে মিলাদের আয়োজন শেষ করে। এরপর সকলে আমরা তার (সাবেক কাউন্সিলর) চেম্বারে যেয়ে কথা বলি। তবে, এখনো ফোনটির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। আর মেয়ের বাবাতো অক্ষরজ্ঞানহীন বয়স্ক মানুষ, তার উপরে মেয়ে হারানোর বেদনা তাই তাৎক্ষনিক যে পুলিশ সদস্য ফোনটি নিয়েছে তাকে চিনতে পারছেনা।
তবে, মুর্শিদার বাবার একটি ভিডিও বার্তা আসে বাংলার জনপদের হাতে সেখানে তাকে বলতে দেখা যায় যে, ফোনটি তিনি ওসি ইমরানের হাতে দিয়েছে। কিন্ত, এ বিষয় নিয়ে প্রতিবেদকের মুখোমুখি হলে মুর্শিদার বাবা জানায়, আমি ফোন কাকে দিয়েছি সেটা জানি না। আমি তাকে চিনি না। তবে তিনি পুলিশের পোশাকেই ছিলেন।
এদিকে মোবাইল নিয়ে শুরু হয় আরেক বিপত্তি, চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমরান জানায়, মোবাইলটি আমি হাতেই নেয় নি। আবার সেই মোবাইল থেকেই আমার নামে ৩২লক্ষ টাকা আদানপ্রদানের অভিযোগ করা হয়েছে। আর এই তথ্য গুলো আবার বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হচ্ছে। আমি এই মোবাইলের বিষয়ে কিছুই জানি না।
ওসি ইমরানের বক্তব্যের জেরে তাকে প্রশ্ন করা হয় নিজ দায়িত্ব পালনে অবহেলা কার? তিনি এ বিষয়েও সঠিক কোনো তথ্য প্রমান উপস্থাপন করতে পারেনি। তদন্ত কর্মকতা থাকার পরেও একই বাসায় বারবার যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি ইমরান বলেন, মৃতের ফোন থেকে আমার নামে বিভিন্ন মিথ্যা বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। আর তাই আমি সেখানে যায়।
ওসি ইমরানের মতো প্রশাসনের এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিকে নিয়ে মিথ্যা কুৎসা রটানোর মতো দু:সাহসিক কাজ কে করতে পারে এমন প্রশ্ন উত্তরে তিনি, বিভিন্ন ইংগিতে তার কয়েকজন সহকর্মীর নাম বলেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এলাকাটিতে জমি জমা সংক্রান্ত নানান জটিলতায় তার (ওসি) শক্ত অবস্থানের কারণেই কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য এমন কাজ করতে পারে।
চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) ইমরানের বক্তব্যের সূত্র ধরে তথ্য অনুসন্ধানে নগরীর তালাইমারি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচাজ আশিকু