বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৬ আসন। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনটি গত ১৫ বছর ধরে জোটের শরিক জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। গত ১০ বছর ধরে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ উদ্দিন মল্লিককে নৌকার মানোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচনি ভোটের মাঠে নৌকার সঙ্গে নেই বাকেরগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ শামসুল আলম চুন্নুর পক্ষে কাজ করছেন। এতে দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়া একাই নৌকার প্রচার করছেন হাফিজ মল্লিক।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, বরিশাল-৬ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য মোট ১২ জন আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্যে হাফিজ উদ্দিনকে নৌকা দেওয়া হয়। পরে দলীয় মানোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মানোনয়নপত্র দাখিল করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চুন্নুসহ চারজন। এ ছাড়া ওই আসনে জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাসদ, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, এনপিপির প্রার্থীরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে নৌকায় প্রার্থী হাফিজ মল্লিকের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) শামসুল আলম চুন্নুর।
স্থানীয়রা জানান, হাফিজ মল্লিক একজন পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি হলেও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার তেমন যোগাযোগ নেই। তবে শামসুল আলম চুন্নু স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় উপজেলা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা তার পাশে আছেন।
স্থানীয়রা আরও জানান, বর্তমানে হাফিজ মল্লিকের পক্ষে প্রচার করছেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মশিউর রহমার জমদ্দারসহ একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও চারজন ইউপি চেয়ারম্যান। তবে আওয়ামী লীগ উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন ডাকুয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির অধিকাংশ নেতা-কর্মী প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর (ট্রাক) পক্ষে প্রচার করছেন।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ার পর হাফিজ উদ্দিন মল্লিক উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীদের ডাকেননি। প্রতীক পেয়ে আমার বাসার সামনে উঠান বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকেও আমাকে ডাকেননি। শুধু আমাকে নয়, দলের অনেক নেতা-কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। যার কারণে আমরা চুন্নু ভাইয়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র লোকমান ডাকুয়া বলেন, ‘হফিজ উদ্দিন মল্লিক নৌকা মনোনয়ন পাওয়ার পর কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন। যার কারণে দলীয় ভাঙন ঠেকাতে নিরুপায় হয়ে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি।’
এ বিষয়ে হাফিজ উদ্দিন মল্লিক বলেন, ‘অবহেলিত জনপদের উন্নয়নের জন্য সবাই নৌকা প্রতীক চেয়েছিলেন। আমি নৌকা পাওয়ার এলাকার জনগণ খুব খুশি হয়েছেন। তারা নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। কিছু মানুষ ওনার সঙ্গে কাজ করছেন। তবে বাকেরগঞ্জের বেশির ভাগ মানুষ তার ওপরে বিরক্ত। কারণ উপজেলা সভাপতি হয়ে নৌকার বিরোধিতা করছেন। তবে তিনি ভোটের মাঠে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবেন না।’