Home » বিআইডিএসের সম্মেলন মাঠপর্যায়ের কাজে বড় সমস্যা ঘুষ

বিআইডিএসের সম্মেলন মাঠপর্যায়ের কাজে বড় সমস্যা ঘুষ

by নিউজ ডেস্ক
views

বিআইডিএসের সম্মেলন মাঠপর্যায়ের কাজে বড় সমস্যা ঘুষ

বিআইডিএসের আয়োজিত দিনব্যাপী শীতকালীন অর্থনৈতিক সম্মেলনে ‘দুর্নীতি ও প্রণোদনা’ শীর্ষক এক অধিবেশনে উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথিরা। গতকাল রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস মিলনায়তনে বিআইডিএসের আয়োজিত দিনব্যাপী শীতকালীন অর্থনৈতিক সম্মেলনে ‘দুর্নীতি ও প্রণোদনা’ শীর্ষক এক অধিবেশনে উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথিরা। গতকাল রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো
সরকারের মাঠপর্যায়ের কাজে সাধারণ ঘুষের পাশাপাশি এক্সটরশন বা তোলাবাজি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী কর্মীদের পাশাপাশি তদারককারী কর্মীরাও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। অনেক সময় তোলাবাজির পরিমাণটা ঘুষের তুলনায় বেশি হয়ে যায়।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) শীতকালীন অর্থনৈতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে দুর্নীতি ও প্রণোদনাবিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধে এসব কথা বলেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ফাহাদ খলিল। তিনি বলেন, যেকোনো উন্নয়নকামী সরকারেরই চিন্তা থাকে দুর্নীতিমুক্তভাবে প্রশাসন পরিচালনা, সেবা প্রদান ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা। এ জন্য মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নকারী কর্মীর পাশাপাশি তদারকি কর্মীরও প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে উভয় পক্ষই দুর্নীতিগ্রস্ত হতে পারে। মূলত ঘুষ ও তোলাবাজি, দুভাবেই দুর্নীতি হয়। তদারককারী কর্মী সৎ হলে তোলাবাজির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। কিন্তু ঘুষের বেলায় এটি করা যায় না। এ ক্ষেত্রে তদারকি কর্মীদের প্রণোদনা দেওয়া একটি ভালো উপায় হতে পারে। তবে এ প্রণোদনা যৌক্তিক হতে হবে।

এই অধিবেশনে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ‘যাঁরা সরকারের প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, তাঁরা ঘুষ-তোলাবাজির বিষয়টি মাথায় রাখেন না। এগুলোর প্রভাব পড়ে বাস্তবায়নে। তোলাবাজির প্রভাব খুবই নেতিবাচক হয়। এটাকে কমিয়ে আনা ও প্রণোদনাকে আরও বেশি বিন্যস্ত করা প্রয়োজন। আমাদের বাস্তবতায় প্রণোদনা মডেলে না গিয়ে শুধু নৈতিকতার মানদণ্ডে হিসাব করে ঘুষ-তোলাবাজি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না।’

মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, প্রণোদনা দিয়েও অনেক সময় ভালো ফল পাওয়া যায় না। ফলে এ নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি ঘুষ ও তোলাবাজি কমিয়ে আনতে প্রযুক্তিগত সমাধানে যাওয়ারও পরামর্শ দেন তাঁরা।

banner

যাঁরা সরকারের প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, তাঁরা ঘুষ-তোলাবাজির বিষয়টি মাথায় রাখেন না। এগুলোর প্রভাব পড়ে বাস্তবায়নে। তোলাবাজির প্রভাব খুবই নেতিবাচক হয়। এটাকে কমিয়ে আনা ও প্রণোদনাকে আরও বেশি বিন্যস্ত করা প্রয়োজন।

বিনায়ক সেন, মহাপরিচালক, বিআইডিএস
বিআইডিএস, বাংলাদেশ ইকোনমিক রিসার্চ নেটওয়ার্ক ও অ্যাসোসিয়েশন ফর ইকোনমিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ অন বাংলাদেশ (এইডিএসবি) যৌথভাবে গতকাল শনিবার বিআইডিএসের ঢাকার আগারগাঁওয়ের কার্যালয়ে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামল চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অতনু রাব্বানি প্রমুখ।

সম্মেলনের তিনটি অধিবেশনে দারিদ্র্য, অসমতা, প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও প্রজনন, দুর্নীতি ও প্রণোদনা এবং করোনায় দূরশিক্ষণ, নতুন দরিদ্র ও প্রবাসী আয়ের ওপর প্রভাব বিষয়ে পৃথক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।

সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ কে এনামুল হকের সভাপতিত্বে দারিদ্র্য, অসমতা ও প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। এই পর্বে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইফপ্রির অর্থনীতিবিদ মো. আল-হাসান একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলেন, ২০১৫ সালে দেশে সরকারি কর্মচারীদের শতভাগ বেতন বৃদ্ধির জেরে বেসরকারি খাতের স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন অনেক কর্মী সাময়িকভাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গিয়েছিলেন, যদিও সেটা সরকারের উদ্দেশ্য ছিল না। তখন শ্রমবাজারে নতুন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তার সঙ্গে বেসরকারি খাতের স্বল্প দক্ষ কর্মীরা মানিয়ে নিতে পারেননি। সে জন্য এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

মো. আল-হাসান বলেন, বাংলাদেশে যখন জাতীয় বাজেট পেশ ও তাতে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব আসে, তখন সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য বেশ দ্রুততার সঙ্গে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। বেতন শুধু সরকারি কর্মচারীদের বাড়লেও বর্ধিত দ্রব্যমূল্যের চাপ সবার ওপরেই পড়ে। কিন্তু বেসরকারি খাতের স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের মজুরি বৃদ্ধির হার কম বলে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জেরে সে সময় (২০১৫ সালে) ওই কর্মীদের অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গিয়েছিলেন।

গবেষণা ফলাফলে বলা হয়েছে, মজুরি বাড়লে দারিদ্র্যসীমাও বেড়ে যায়। সবার মজুরি একই হারে বাড়ে না। সে জন্য এই সীমা ১০ শতাংশ বেড়ে গেলে দারিদ্র্য ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।

মো. আল-হাসান আরও বলেন, ২০১০ থেকে ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে দক্ষ কর্মীদের মজুরি বেড়েছে ১৪০ শতাংশ, কিন্তু স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের মজুরি বেড়েছে ৯০ শতাংশ। এর বিপরীতে দেশের সরকারি কর্মচারীদের মজুরি একই সময়ে বেড়েছে ১৩০ থেকে ১৫৫ শতাংশ। উপস্থাপনায় বলা হয়, বাজারে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের সরবরাহ কম থাকায় তাঁরা নিজেদের মজুরি বাড়িয়ে নিতে পারেন, কিন্তু স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের সরবরাহ বেশি থাকায় তাঁদের মজুরি তেমন একটা বাড়ে না।

আল–হাসানের উপস্থাপনার পর বিআইডিএসের বর্তমান ও সাবেক গবেষক ও অর্থনীতিবিদেরা প্রশ্ন করেন। এর মধ্যে সংস্থাটির সাবেক গবেষণা পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, ওয়ার্কার বা শ্রমিক বলতে কারখানার কর্মীদের বোঝানো হয়, কিন্তু যাঁরা প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনাগত কাজে জড়িত, তাঁদের বোঝানো হয় না। এ গবেষণায় যদি বেতনভুক্ত সব কর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাহলে বিষয়টি গবেষণার জন্য যথাযথ হয়নি। তাঁর মতে, সবাইকে এক কাতারে তুলনা করা যায় না।

বিআইডিএসের গবেষক কাজী ইকবাল বলেন, বেতন বৃদ্ধির আগে থেকেই একধরনের ধারণা থাকে যে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। তখন মানুষ নিজে থেকেই মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করে দেয়। সে জন্য প্রত্যাশিত মূল্যবৃদ্ধি ও অপ্রত্যাশিত মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পৃথকভাবে করা গেলে ভালো হয়।

জবাবে গবেষক মো. আল-হাসান বলেন, এ গবেষণায় সব ধরনের কর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাঁদের মজুরি ২০১০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্মী বা কারখানার শ্রমিকদের আলাদা করা হয়নি। তবে দারিদ্র্য বৃদ্ধির বিষয়টি সাময়িক বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রথম অধিবেশনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিন মাসুদ আলী ‘স্থানীয় সরকারের ইউনিট খণ্ডিত করা হলে কি দারিদ্র্য বিমোচন হয়’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে বলেন, বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ইউনিট খণ্ডিত করার কারণে দারিদ্র্যে কী প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে গবেষণা হয়নি। সেই বাস্তবতা থেকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে, এর ফল কী হয়। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের ইউনিট খণ্ডিত করা হলে প্রাথমিকভাবে দারিদ্র্য কিছুটা কমতে পারে, কিন্তু খণ্ডিতকরণ নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে পরবর্তীকালে দারিদ্র্য আবার কিছুটা বাড়তে পারে।

মাসুদ আলীর মতে, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতির ওপর বিষয়টি নির্ভর করে না। যে জেলার সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা বেশি, তাঁরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পায়, সমন্বয়েরও সমস্যা হতে দেখা যায়।

You may also like

Leave a Comment

NatunMatra Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: অভিলাস দাস তমাল

বার্তা সম্পাদক: এহেসান হাবিব তারা

উপদেষ্টা: মাসুদ রানা রাব্বানী

নিউমার্কেট পূবালী  ব্যাংকের গলি, সুলতানাবাদ, ঘোড়ামারা, রাজশাহী – ৬১০০

মোবাইল: ০১৭৭২-৩৫৯২২২, ০১৭১১-৯৫৪৬৪৭ 

মেইল: news@natunmatra24.com

Edtior's Picks

Latest Articles

Natun Matra All Right Reserved. Designed and Developed by Ecare Solutions

শিরোনাম: