Home » হাতেম খাঁ’র জমিদার বাড়ির ইতিহাস ।

হাতেম খাঁ’র জমিদার বাড়ির ইতিহাস ।

‘ইমাদ উদ্দিন লজ’,

by নিউজ ডেস্ক
views

হাতেম খাঁ’র জমিদার বাড়ির ইতিহাস

এহেসান হাবিব রাজশাহীঃ হাতেম খাঁ’র জমিদার বাড়ির ইতিহাস রাজশাহী মহানগরীর আধুনিকায়নের সূচনাই হাতেম খাঁ ছিল মুসলিম অভিজাত পরিবারের আবাসন এলাকা। আশরাফ আলী ব্যারিস্টারের বাড়ি ‘চৌধুরী দালান’, খান বাহাদুর ইমাদ উদ্দিনের ‘ইমাদ উদ্দিন লজ’, খোন্দকার ওয়াসিমুদ্দীনের বাড়িসহ আরো বিখ্যাত সমাজহিতৈষী বাস করতেন হাতেম খাঁয়। রাজশাহী মহানগরীর মধ্যবর্তী এলাকায় এ মহল্লাটির বর্তমান অবস্থান ১১ নং ওয়ার্ডে। এর নামের বানানে বিভিন্নতা দেখা যায়। যেমন- হাতেমখাঁ, হাতেমখান, হেতমখাঁ, হেতমখান, হেতেমখান, হেতেমখাঁ ইত্যাদি। এ মহল্লার একটি পুরনো অভিজাত পরিবার সূত্রে পাওয়া বানান হাতেম খাঁ। এখানে হাতেম খাঁ বানানেই এ মহল্লার একটি জমিদার পরিবার সম্পর্কে আলোচিত হলো। জমিদারির নাম চৌধুরাণী নসিমন্নেসা জমিদারি এস্টেট। চৌধুরাণী নসিমন্নেসা জমিদারি এস্টেটের বাড়িটি হাতেম খাঁ সদর হাসপাতালের মোড় থেকে বর্ণালীমুখী রাস্তার পূর্বপাশ সংলগ্ন। বাড়িটির বিপরীত পাশে অবস্থিত মুসলিম হাই স্কুল। দোতলা এ বাড়িটি আনুমানিক সোয়াশ বছর পূর্বে নির্মিত হয়। নির্মাণ করেছিলেন এ জমিদারির পূর্ব পুরুষ। বর্তমানে বাড়িটির সামনে একটি বৃহৎ সাইন বোর্ড দেখা যায়। যার শিরোনাম ব্যারিস্টার আসিফ খান চৌধুরী। এ জমিদার বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মো. মনজুর মুর্শেদ খান চৌধুরী শিশির (১৯৬৯-) এবং ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে শিশিরের দুই চাচাতো ভাই তৌহিদ আরিফ খাঁন চৌধুরী (ভারপ্রাপ্ত কন্ট্রোলার, রুয়েট), মো. মোফাক্কার মোর্শেদ খাঁন চৌধুরী (প্রোগ্রাম ম্যানেজার, টিআইবি, রাজশাহী) এর নিকট থেকে জানা যায়, ব্যারিস্টার আসিফ খান চৌধুরী পেশা সূত্রে ঢাকাবাসী হলেও বর্তমান প্রজন্মের সবাই এ বাড়িতে বাসের মাধ্যমে পূর্ব সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছেন। এ জমিদারির পূর্ব পুরুষগণ এসেছিলেন উনবিংশ শতাব্দির প্রথম ভাগে পাকিস্তানের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত প্রদেশের ওয়াজিরিস্তান থেকে। বাংলাদেশে প্রথমে তাঁদের স্থায়ী আবাসন ছিল রাজশাহীর পবা উপজেলার দুয়ারীতে। পূর্বে তাঁরা ব্যবসায়ী পেশায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ব্যবসায় ব্যাপক উন্নতি সাধনের পর জমিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। রাজাবাড়ী, দুয়ারী, রাজশাহী শহরের হাতেম খাঁসহ আরও বেশ কয়েকটি এলাকা এ জমিদারিরর আওতাভুক্ত ছিল। যে সব জায়গায় এ এষ্টেটের জমিদারি ছিল সে সব স্থানের অধিকাংশে তাঁরা বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। দুয়ারীতে কয়েক বৎসর পূর্বেও এ জমিদার বাড়ির ভগ্নাবশেষ ছিল। জমিদারি কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে বৎসরের বিভিন্ন সময় জমিদারগণ এ সব বাড়িতে অবস্থান করতেন। হাতেম খাঁয় অবস্থিত বাড়িটিতে তাঁরা ১৮৮০ সালের দিক থেকে বছরের অধিকাংশ সময় বসবাস আরম্ভ করেন। তখন হাতেম খাঁ মহল্ল­ার বেশি অংশ ছিল ঘন গাছপালায় জঙ্গলময়। প্রচুর সাপের বাস ছিল। প্রায় রাতে বাঘের আগমন ঘটত। অধিকাংশ মানুষ ছিল অতি দরিদ্র। সে সময় এ জমিদার পরিবার পক্ষ থেকে বেশ কিছু রাস্তা সংস্কারের মাধ্যমে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছিল। নতুন রাস্তাও নির্মাণ করা হয়েছিল। এ রকম জনহিতকর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তৎকালীন মিউনিসিপ্যালিটি এ পরিবারের দুজন সদস্যের নামে দুটি রাস্তার নামকরণ করে। সদর হাসপাতালের মোড় থেকে উত্তর দিকে প্রবাহিত বর্ণালীর পিছন পর্যন্ত রাস্তাটির নাম দেয়া হয়েছিল সোলেমান খান চৌধুরী সড়ক। সোলেমান খান চৌধুরী ছিলেন আব্দুল হাকিম খান চৌধুরীর পিতা। হাতেম খাঁর চৌধুরাণী নসিমন্নেসা মঞ্জিলের দক্ষিণপাশ সংলগ্ন পুকরের দক্ষিণ পাশের শাহাজিপাড়া হয়ে বেগম রোকেয়া রাস্তা সংযুক্ত রাস্তাটি চৌধুরাণী নসিমন্নেসা সড়ক নামকরণ করা হয়েছিল। চৌধুরাণী নসিমন্নেসা ছিলেন সোলেমান খান চৌধুরীর স্ত্রী। তাঁর নামেই এ জমিদার বাড়িটি বিদ্যমান। রাস্তা দুটি আজও এ পরিবারের জনকল্যাণ অবদানের সাক্ষ্য বহন করছে। সমকালীন সময়ে যাঁরা প্রসিদ্ধ ছিলেন তাঁদের মধ্যে এ পরিবারটির কয়েকজন ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে জমিদার আব্দুল হাকিম খান চৌধুরী (মৃত্যু ২৮ নভেম্বর ১৯৪১) ও তাঁর ছোট ভাই জমিদার আব্দুল খালেক খান চৌধুরী (মৃত্যু ১২ জুন ১৯৭৩)। দুই ভাইয়ের বয়সের বেশ ব্যবধান থাকলেও সম্পর্ক ছিল গভীর। তাঁরা একই সঙ্গে জমিদারি পরিচালনা করতেন। চেতনার দিক থেকে জমিদার হাকিম খান চৌধুরী ছিলেন শিক্ষানুরাগী ও মুক্ত মনের মানুষ। তিনি মুসলিম ছাত্রদের লেখাপড়া করার জন্য আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি তাঁদের কাচারী ঘরে থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা রেখেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে হিন্দু-মুসলিম বৈষম্যভিত্তিক সামাজিক ব্যবস্থাপনায় মুসলমানদের অগ্রগামীকরণের ক্ষেত্রে রামপুর রোয়ালিয়া শহরে যে কয়েকজন ব্যক্তিকে নেতৃস্থানে থেকে সোচ্চার থাকতে দেখা যায় তৎকালীন জমিদার হাকিম খান চৌধুরী ছিলেন তাঁদের অন্যতম। জানা যায়, মিয়াপাড়ার সাধারণ গণ গ্রন্থাগারে ‘গ্রেটওয়ার’ নামে একটি বই ধার নেয়াকে কেন্দ্র করে একজন মুসলিম আইনজীবীর অপমানবোধ থেকে ১৯২৭ সালে স্থাপন হয়েছিল ‘দি রাজশাহী মুসলিম ক্লাব’ ও এ ক্লাবের আমন্ত্রণেই ১৯২৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর এসেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এ ঐতিহাসিক কর্ম দুটিতে যাঁরা সক্রিয় ছিলেন তাঁদের মধ্যে জমিদার আব্দুল হাকিম খান চৌধুরী ও তাঁর ছোট ভাই জমিদার আব্দুল খালেক খান চৌধুরীকেও পাওয়া যায়। অন্যদের মধ্যে ছিলেন জমিদার হাজি লাল মোহাম্মদ, তাঁর পুত্রদ্বয় আব্দুল মজিদ মিয়া ও মুহম্মদ আবদুস সামাদ, জেলা ও দায়রা জজ টিআই এম নূরুন্নবী চৌধুরী, মওলানা অধ্যাপক হায়দার আলী (রাজশাহী কলেজের আরবি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক), রাজশাহীর সদর মুন্সেফ ওবায়দুস সোবহান, রাজশাহী জজ কোর্টের নাজির মহাম্মদ শরাফুদ্দীন, রাজশাহী মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান আইনজীবী আজিজুল আলম, বাঘার জমিদার শামসুল ইসলাম রইস ওরফে নাবালক মিয়া, রাজশাহী কলেজের অধ্যাপক শেখ শরফুদ্দীন, মহসিন মিয়া, সিভিল সার্জন ডা. মনসুর রহমান, রাজশাহী কলেজের প্রিন্সিপাল টিটি উইলিয়ামস, ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, মাদার বখ্শ, আশরাফ আলী ব্যারিস্টার, বাবু মহেন্দ্রকুমার শাহ চৌধুরী প্রমুখ। কবি শাহাদত হোসেন ও কবি বন্দে আলী মিয়াও ট্রেনে নজরুলের সঙ্গী ছিলেন। তবে তাঁরা পাবনার উদ্দেশ্যে ঈশ্বরদীতেই নেমে পড়েছিলেন। জমিদার হাকিম খান চৌধুরী ‘দি রাজশাহী মুসলিম ক্লাব’ এর

You may also like

Leave a Comment

NatunMatra Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: অভিলাস দাস তমাল

বার্তা সম্পাদক: এহেসান হাবিব তারা

উপদেষ্টা: মাসুদ রানা রাব্বানী

নিউমার্কেট পূবালী  ব্যাংকের গলি, সুলতানাবাদ, ঘোড়ামারা, রাজশাহী – ৬১০০

মোবাইল: ০১৭৭২-৩৫৯২২২, ০১৭১১-৯৫৪৬৪৭ 

মেইল: news@natunmatra24.com

Edtior's Picks

Latest Articles

Natun Matra All Right Reserved. Designed and Developed by Ecare Solutions

শিরোনাম: