চুুঁইঝাল এখন মাঠ ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে যশোরে। সাধারণত বনবাঁদাড়ে বিভিন্ন গাছে চুঁই চাষ হলেও চলতি মৌসুমে যশোরে ধান-পাট-সবজিসহ অন্যান্য ফসলের মতোই মাঠে চাষ হচ্ছে চুঁই। কৃষক বলছে,এ চুঁই চাষে তারা ব্যাপক লাভের আশা দেখছেন।
কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, যশোরে সাধারণত ধান-সবজিসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ বেশি হয়। মসলা জাতীয় ফসলের দিক থেকে যশোর অনেক পিছিয়ে ছিলো। কিন্তু গত কয়েক বছরে এ জেলায় অন্যান্য ফসলের চেয়ে মসলা জাতীয় ফসলের চাষ বেড়েছে। আর এরমধ্যে অধিক লাভজনক চুঁই ঝালের চাষ বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। তবে আগে চুঁই চাষ বিভিন্ন বনবাঁদাড়ে ও গাছে চাষ করা হলেও এখন এটি মাঠ ফসল হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জেলার সদর, মনিরামপুর, শার্শাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার চাষিরা এখন ধান-পাট, সবজির মতোই ক্ষেতে চুঁই ঝালের চাষ করছেন। তবে এ ক্ষেত্রে কৃষককে উন্নত জাতের চুঁইয়ের চারা সরবরাহে বিশেষ ভূমিকা রাখছে যশোর হর্টিকালচার সেন্টার।
যশোর খয়েরতলা হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক দীপঙ্কর দাস বলেন, দেশের যে মসলার চাহিদা রয়েছে তার বড় একটি অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এসব মসলার মধ্যে চুঁই ঝালও অন্যতম। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ চুঁইঝালের বেশ চাহিদাও রয়েছে বাংলাদেশে। এজন্য ২০২২ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে দেশে মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা করে। ১১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের ১১০টি উপজেলার ও ২৫টি হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে কৃষককে উন্নত জাতের চুঁইয়ের চারা, সার-কীটনাশক ও নগদ অর্থ দিয়ে চুঁই চাষের সম্প্রসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। যশোরের সদর, মনিরামপুর ও ঝিকরগাছা এলাকার কৃষকদের মাঝে এসব চারা ও কৃষি উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। প্রথম বছরেই কৃষক পরীক্ষামূলক চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন।
মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রাসেল আহমেদ বলেন, ২০২২ সাল থেকে যশোর হর্টিকালচার সেন্টারে ডুমুরিয়া থেকে চ্ুঁইয়ের মাতৃ গাছ এনে সেখানে পরিচর্যা করে চারা তৈরি করা হয়। এরপর এসব চারা জেলার ৮টি প্রদর্শনী এলাকায় ১২০ জন কৃষকের মাঝে সরবরাহ করা হয়। ঝাড়চুঁই নামের এই উন্নত জাতের চুঁই ঝাল চাষে কৃষক প্রথম বছরেই বেশ সফল হয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিবিঘা জমিতে ৮শরও বেশি চুঁইয়ের গাছ লাগানো যায়। প্রতিটি গাছ থেকে ৪ থেকে ৫ কেজি চুঁই ঝাল উৎপাদন করা সম্ভব। সে হিসেবে এক বিঘা জমিতে ১ লাখ টাকা খরচ করে কৃষক সহজেই ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে তিনি দাবি করেন।
যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির আব্দুলপুরের কৃষক লিটন সরদার বলেন, তিনি আগে থেকে বাড়ির আশপাশে বাগানে গাছে চুঁইঝালের চাষ করেন। তবে গত বছর থেকে তিনি ঝাড়চুঁই নামে এই চুঁই সবজি ক্ষেতে চাষ শুরু করেন। এক বছরেই তার ক্ষেতে নতুন জাতের এ চুঁইয়ের ব্যাপক ফলন দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, আর কয়েক মাস পর এখান থেকে চুঁই ঝাল উৎপাদন করা যাবে। প্রতিটি গাছ থেকেই তিন থেকে চার হাজার টাকার চুঁই পাবেন বলে তিনি আশা করেন।
প্রকল্প এলাকা সম্প্রতি কৃষি বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করেছেন। প্রথম বছরেই পরীক্ষামূলক এ ফলনে ব্যাপক আশাবাদী কৃষি বিভাগের শীর্ষকর্মকর্তারা। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরাঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, যশোরে মাঠ ফসল হিসেবে চুঁই চাষ হচ্ছে এটি বড় ধরনের সফলতা। কারণ ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষে খরচ বেশি কিন্তু আয় কম। অথচ চুঁই চাষে খরচের চেয়ে আয় কয়েকগুণ বেশি। আশা করছি এ ধরনের চাষ আগামীতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য জেলাতেও ছড়িয়ে পড়বে। আর তখন দেশের মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে চুঁই চাষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।