Home » গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে চীন যেটা বেছে নিতে পারে

গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে চীন যেটা বেছে নিতে পারে

by নিউজ ডেস্ক
views

গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে চীন যেটা বেছে নিতে পারে

নভেম্বরে সান ফ্রান্সিসকোতে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকে উভয়ে গাজা ও ইউক্রেনে সাময়িক যুদ্ধবিরতি বিষয়ে একমত হয়েছিলেন। একদিকে, এ ঐকমত্য যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছিল, অন্তত খুব শিগগিরই কোনো তৃতীয় ফ্রন্ট খুলছে না। অন্যদিকে, এতে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় তাইওয়ানের নির্বাচন সামনে রেখে চীন একটু শ্বাস ফেলার ফুরসত পাবে। যুদ্ধবিরতিটি উভয়ের জন্য কল্যাণকর, তবে এটি নিছক একটি সাময়িক ব্যবস্থা। পরবর্তী চার থেকে ১৪ মাস আমরা দেখব, এটি তাৎপর্যপূর্ণ কোনো কিছু বয়ে আনে কিনা। তবে ঠিক এই মুহূর্তে এ রকম কিছু দেখা যাচ্ছে না।

অবশ্য গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের আপাত ভাষ্য হলো, তারা মার্চের মধ্যে অঞ্চলটি দখল করবে এবং হামাসের সশস্ত্র শাখাকে নির্মূল করবে। এটি তাদের ইচ্ছা ও আশা– শুধু এ কারণে নয়, হামাস ইসরায়েলের শত্রু। বরং এ কারণে, হামাসের বিরুদ্ধে এক দল শত্রু জোট বেঁধেছে। অনেক আরব দেশ চায় না হামাস তাদের পলিসি চুরি করুক, যেমনটা এর আগে করেছিল আইসিস, আল কায়দা ও পিএলও।
সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলো হামাসের গণহত্যা ও কমবেশি প্রশ্নবিদ্ধ ইসরায়েলি নীতিগুলোর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। এগুলোতে বরং ইহুদিবিদ্বেষের সুপ্ত নারকীয় বীজটি প্রকাশ পায়।

এদিকে ইউরোপে ফিলিস্তিনের পক্ষে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন ছাড়িয়ে হামাসের পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ চাঙ্গা হওয়ার ভয় জেগেছে। এটি মৌলিক একটি সমস্যা, ১৯৯৩ সালে ফিলিস্তিন মুক্তিকামী দলের (পিএলও) সঙ্গে চুক্তির পর থেকে ইসরায়েল ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটাতে পারেনি। সমস্যাটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ, বিষয়টি সমাধানযোগ্য বলে মনে করা হয়নি।
তবে যে কোনোভাবেই হোক ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান করতে হবে। কারণ লাখ লাখ মানুষ তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি বিশ্বাসযোগ্য ধারণা পেতে চায়। সমাধানটি যেন এমন না হয়, তাদের কোনো বদ্ধ জায়গায় গাদাগাদি করে বসবাস অথবা হামাস সন্ত্রাসীদের কাছে আত্মসমর্পণ করার মধ্যে একটাকে বেছে নিতে হবে।

ইসরায়েলকে অন্যদিক থেকেও বিষয়টি ভাবতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের বাকি অংশের সঙ্গে আরও বেশি কার্যকরভাবে যুক্ত হতে গেলে ইসরায়েলকে একটি পন্থা খুঁজে বের করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে ইউরোপের ঘাঁটি হিসেবে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। বরং ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যে ইউরোপ ও পাশ্চাত্যের মধ্যকার সেতু হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে। এরই মধ্য দিয়ে স্বয়ং ইসরায়েলের যেমন অগ্রগতি আসবে, তেমনি মধ্যপ্রাচ্য ও পাশ্চাত্যও লাভবান হবে।

banner

সিরিয়া বা ইরানের সঙ্গে বছরের পর বছর চলমান অস্ত্রবিষয়ক শান্তি আলোচনার একটা অধিকতর স্থিতিশীল সমাধান প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে শুধু ইসরায়েল নয়, ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোরও যুক্ত হওয়া জরুরি।

৫০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের একটি গেরিলা দলকে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর পর তারা এ সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে ইউক্রেন নিজেদের ভিত নির্মাণ করেছে এবং দুই বছর ধরে রাশিয়াকে ঠেকিয়ে রেখেছে। পরিস্থিতি বলে, অন্তত আগামীকালই তারা আত্মসমর্পণ করছে না। জুন মাসে ভাগনার গ্রুপের প্রধান প্রিগোজিনের নেতৃত্বে সংঘটিত মস্কো অভ্যুত্থানের কথাও মনে রাখতে হবে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং মস্কোকে গভীর ঝাঁকুনি দিয়েছিল। কিয়েভের অবস্থাও নড়বড়ে, তবে বহির্বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক শক্তি তাকে একসঙ্গে ধরে রাখতে পারে। মস্কোকে একাই চলতে হবে। আমি বেইজিং, তেহরান অথবা পিয়ংইয়ংকে ক্রেমলিন ষড়যন্ত্রের খেলোয়াড় বলে মনে করি না।

এই ভাসমান অবস্থা থেকে উঠে আসতে হলে পুতিন ও মস্কোকে অনেক ভাবতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যদি দু’পক্ষ এই অচলাবস্থা মেনে নেয়, তাহলে রাশিয়া হয়তো বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে, কিন্তু পুতিন জনবিক্ষোভ থেকে রেহাই পাবেন না। এটি বাস্তবসম্মত নয়– মার্চের মধ্যেই ইউক্রেন সমস্যার সমাধান হবে। তা ছাড়া সমস্যার সমাধান যদিও হয়, তার পরও মস্কোতে এই রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রভাব পড়বে। এমনকি তত্ত্বগত দিক থেকে সেখানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা আছে।

পুতিনের যুদ্ধ থামানোর ইচ্ছা নেই। নিজের বন্ধুদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য তাঁর মতো করে ‘বিজয়’ অর্জন কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। টিকে থাকার জন্য অল্প মাত্রায় হলেও পুতিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বাধ্য হবেন, যা তাঁকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখবে এবং সম্ভবত তা অভ্যন্তরীণ বা বহিঃশত্রুদের ধীরে ধীরে নিঃশেষ করতে ভূমিকা রাখবে। অথবা তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পাদিত কিছু চুক্তি বাতিল করতে হবে, যা চীনকে আরও বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। অন্যদিকে, গাজার যুদ্ধের সমাপ্তির পর অন্য কোনো নতুন দিকের সূচনা ঘটবে। অন্তত পক্ষে লেবানন, সিরিয়া ও ইরান রাজনৈতিকভাবে মনোযোগে আসবে।

ফ্রান্সেসকো সিসি: চীনের ইনস্টিটিউট অব ইউরোপিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক; এশিয়া টাইমস থেকে ভাষান্তর করেছেন ইফতেখারুল ইসলাম

You may also like

Leave a Comment

NatunMatra Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: অভিলাস দাস তমাল

বার্তা সম্পাদক: এহেসান হাবিব তারা

উপদেষ্টা: মাসুদ রানা রাব্বানী

নিউমার্কেট পূবালী  ব্যাংকের গলি, সুলতানাবাদ, ঘোড়ামারা, রাজশাহী – ৬১০০

মোবাইল: ০১৭৭২-৩৫৯২২২, ০১৭১১-৯৫৪৬৪৭ 

মেইল: news@natunmatra24.com

Edtior's Picks

Latest Articles

Natun Matra All Right Reserved. Designed and Developed by Ecare Solutions

শিরোনাম: