আজ ১৬ ডিসেম্বর,মহান বিজয় দিবস! এই বিজয় দিবস যেন বাঙালির হৃদয়ের হৃৎস্পন্দন।বিজয় দিবসেই যেন লুকিয়ে আছে বাঙালি জাতির বিজয়ের উচ্ছাস ও একরাশ স্মৃতি। বিজয় দিবস নামটি উচ্চারণ করলেই বাঙালির হৃদয়ে এসে ভিড় করে মুক্তিযুদ্ধের হাজারো স্মৃতি। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর আজকের এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯৩,০০০ হাজার সদস্য আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে বাঙালি এ দিনটি অর্জন করে। ১৯৭২ সাল থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশে বিজয় দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। নানা আয়োজেনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধাভরে বীরসেনাদের স্মরণের মাধ্যমে বাঙালি এ দিনটি উদযাপন করে।
আর সেই মহান বিজয় দিবস নিয়ে আয়োজনের কমতি নেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসেও। প্রতি বছর দিনটি নানা আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপন করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবন ছাড়াও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন আলোকসজ্জিত করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক, জোহা চত্বর, শহীদ ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী প্রশাসন ভবন, শহিদ মিনার, অ্যাকাডেমিক ভবন ও আবাসিক হলগুলো সেজেছে নববধূর সাজে।
নববধূর এ সাজের প্রতি ভালোবাসা ব্যক্ত করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তারেকুল আরেফিন বলেন, ‘দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী এক সংগ্রামের ফল আমাদের বিজয় দিবস। এ দিনে আমরা সবাই বিজয়ের উচ্ছাসে মেতে উঠি। বরাবরের মতো এবারও লাল সবুজ বর্ণালীতে সেজে উঠেছে আমাদের রাবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে প্রশাসনিক ভবন, পুরো অংশটিতেই ধরা দিয়েছে লাল সবুজের আলোকছটার অনন্য ঢেউ খেলা। সত্যিই এ যেন এক অভূতপূর্ব দৃশ্যায়ন। যা স্বাধীনচেতা বাঙালী জাতির বিজয় উল্লাসকে ধারণ করে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণেও বসানো হয়েছে চমকপ্রদ আলোক যন্ত্র। সত্যিই ১৬ই ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাসকে এরূপে ফিরে পেয়ে রাবির একজন ছাত্র হিসেবে আমি উচ্ছ্বসিত।কেননা দুটি চোখে আজ যতবারই ক্যাম্পাসের এমন বর্নালী সাজ দেখেছি ততবারই মনের কোণে বিজয়ের চেতনা নাড়া দিয়ে উঠেছে।’
একই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ফেরদাউস ইসলাম শুভ বলেন, ‘আজ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্ণ হল। সিনিয়রদের কাছ থেকে শুনেছিলাম প্রতিবছর নানান আয়োজনে রাবিতেও এই দিনটিকে উদযাপন করা হয়। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম নয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, প্যারিস রোড, পরিবহন চত্বর, টুকিটাকি চত্বর ও বিভিন্ন আবাসিক হলগুলো যে মনকাড়া সৌন্দর্যে সাজানো হয়েছে, যা সত্যিই বলা বাহুল্য।
তিনি আরও বলেন, রাবির একজন শিক্ষার্থী হয়ে নিজেকে যেন অন্য দশ জনের থেকে একটু বেশি গর্ববোধ হচ্ছে। এতো মনমুগ্ধকর ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী হতে পারাটা কয়জনেরই বা কপালে থাকে। আজ এতো আনন্দের মাঝে যেন ছোটবেলার একটি কবিতা মনে পড়ে গেল, বিজয় মানে উল্লাস, বিজয় মানে চেতনা, বিজয় মানে নতুন করে, নতুন প্রজন্মের সূচনা।’
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই মহান বিজয় আমাদের অর্জিত হয় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। এই দিনটি শুধুই আমাদের বিজয়ের দিন নয়, বেদনারও দিন। আমাদের চেতনা জাগরণেরও দিন। যাঁদের ত্যাগ–তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে আমরা এই গৌরবের অধিকার পেয়েছি, তাঁদের সেই আত্মোৎসর্গের কথা মনে রেখে আমাদেরও সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে। দেশ ও জাতিকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবেই বিজয় দিবসের মহিমা অর্থবহ হয়ে উঠবে।