Home » রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফে ফজিলত সমূহ

রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফে ফজিলত সমূহ

by নিউজ ডেস্ক
views

শাহজাহান কবির প্রধান:

ইতিকাফ হচ্ছে আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে পড়া বা আবদ্ধ হয়ে থাকা। ইসলামি শরীয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশক বা অন্য কোনো সময় জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহকে খুশি করার নিয়তে পুরুষের জন্য মসজিদে এবং নারীদের জন্য ঘরে নামাজের নির্দিষ্ট একটি স্থানে ইবাদত করার উদ্দেশ্যে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৫)। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) আজীবন রমাদান মাসের শেষ দশকগুলো ইতিকাফ করেছেন। তাঁর ওফাতের (আগে) পরেও তাঁর বিবিগণ (ঘরে) ইতিকাফ করতেন। (বুখারি ও মুসলিম; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৪৬, পৃষ্ঠা: ১২৯)।

banner

ইতিকাফ একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইবাদত। রমজানের শেষ দশক তথা ২০ রমজান সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে ঈদের চাঁদ তথা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়া বা ৩০ রমাদান পূর্ণ হয়ে ওই দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ কিফায়াহ। কোনো মসজিদ মহল্লায় কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হবে। আর কেউই আদায় না করলে সবাই সুন্নাত তরকের দায়ে দায়ী থাকবে। তবে আদায়ের ক্ষেত্রে যিনি বা যাঁরা আদায় করবেন, শুধু তিনি বা তাঁরাই সওয়াবের অধিকারী হবেন।

অসংখ্য হাদিসে ইতিকাফ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্য থেকে ফজিলত সম্পর্কিত কিছু হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো : হজরত আয়েশা (রা.) বলেন : ‘ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, এরপর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন। ‘ (বুখারি : ১৮৬৮; মুসলিম : ২০০৬)

আবু হুরাইরা (রা) বলেন : ‘রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান। ‘ (বুখারি : ১৯০৩)

রাসুল (সা.) বলেন : ‘আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। অতঃপর ওহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হলো যে তা শেষ ১০ দিনে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইতিকাফ পছন্দ করে, সে যেন ইতিকাফে বসে। ‘ (মুসলিম : ১৯৯৪)

ইতিকাফের ফজিলতঃ-

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দোয়া করতে থাকেন যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে। তারা বলতে থাকে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে এবং নামাজ তাকে আটকে রাখবে, তার পরিবারের কাছে যেতে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না, ফেরেশতারা তার জন্য এভাবে দোয়া করতে থাকবে। ‘ (মুসলিম : ৬০১১)

মসজিদে ইতিকাফের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশে নিজেকে আবদ্ধ করে নেওয়ার কারণে মুসলমানের অন্তরের কঠোরতা দূরীভূত হয়, কেননা কঠোরতা সৃষ্টি হয় দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও পার্থিবতায় নিজেকে আরোপিত করে রাখার কারণে। মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার কারণে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসায় ছেদ পড়ে এবং আত্মিক উন্নতির অভিজ্ঞতা অনুভূত হয়।

আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা : আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট হওয়া এবং আল্লাহকেন্দ্রিক ব্যতিব্যস্ততা যখন অন্তর সংশোধিত ও ইমানি দৃঢ়তা অর্জনের পথ, কেয়ামতের দিন তার মুক্তিও বরং এ পথেই। তাহলে ইতিকাফ হলো এমন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে বান্দা সমস্ত সৃষ্টি জীব থেকে আলাদা হয়ে যথাসম্ভব প্রভুর সান্নিধ্যে চলে আসে।

শবেকদর তালাশ করা : ইতিকাফের মাধ্যমে শবেকদর খোঁজ করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মূল উদ্দেশ্য ছিল। আবু সায়ীদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস সে কথারই প্রমাণ বহন করে, তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘আমি প্রথম দশকে ইতিকাফ করেছি এই (কদর) রজনী খোঁজ করার উদ্দেশ্যে। অতঃপর ইতিকাফ করেছি মাঝের দশকে। অতঃপর মাঝ দশক পেরিয়ে এলাম। তারপর আমাকে বলা হলো, (কদর) তো শেষ দশকে। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ তাকওয়া অর্জন করতে চায় সে যেন ইতিকাফ করে। ‘ (মুসলিম : ১১৬৭)

You may also like

Leave a Comment

NatunMatra Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: অভিলাস দাস তমাল

বার্তা সম্পাদক: এহেসান হাবিব তারা

উপদেষ্টা: মাসুদ রানা রাব্বানী

নিউমার্কেট পূবালী  ব্যাংকের গলি, সুলতানাবাদ, ঘোড়ামারা, রাজশাহী – ৬১০০

মোবাইল: ০১৭৭২-৩৫৯২২২, ০১৭১১-৯৫৪৬৪৭ 

মেইল: news@natunmatra24.com

Edtior's Picks

Latest Articles

Natun Matra All Right Reserved. Designed and Developed by Ecare Solutions

শিরোনাম: