কালের পরিক্রমায় উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। বাঙালি জাতির একটি চিরাচরিত ঐতিহ্য রয়েছে ভোজনরসিক বা ভোজনবিলাসিতায়। তবুও বাঙালি তার নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে এক চুলও দুরে সরে যায়নি। এমন বাস্তব চিত্র আবারও চোখে পড়লো গাজীপুরের কালিয়াকৈরের গ্রাম বরিয়াবহ-হরিণহাটিতে। এই গ্রামেরই বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম আজিজ।
বছর কয়েক আগে এই আজিজুল ঝালমুড়ি বিক্রেতা ছিলেন। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে ২০১৫ সালে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করেন হালিম বিক্রির কাজ।
প্রথমদিকে তার ভ্রাম্যমাণ হালিমের দোকানে হালিম খাওয়ার ক্রেতা কম আসতে থাকে। অনেকেই অবহেলা করে বলেন, ফুটপাতের হালিম আর কেমন স্বাদের হবে। তবে এর মধ্যেই কিছু ভোজন রসিক তার দোকানে কম মূল্য দেখে হালিম খেতে আসেন। আর যারা আসেন তারাও বুঝতে পারেন আজিজ ভাইয়ের হালিমের স্বাদ চমৎকার এবং মানেও ভালো। এর পরে আস্তে-আস্তে আজিজের হালিমের কথা ছড়িয়ে পড়ে পুরো কালিয়াকৈর জুড়ে।
এরপর হালিমের সঙ্গে নেহারি যোগ করেন তিনি। নেহারি খেয়েও ব্যাপক প্রশংসা করেন ক্রেতারা। ভোজনরসিকরা দেখেন হালিমের চেয়ে নেহারি আরও বেশি রুচিসম্মত। মাস দুই যাওয়ার পর থেকেই ভোজন পিপাসুদের মুখে-মুখে আজিজ ভাই থেকে আজিজ মামা বলে নাম ডাক শুরু হয়। পরে একটা সময়ে আজিজ মামার হালিম-নেহারি পুরো গাজীপুরে সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্রেতা আজিজ বলেন, আমি একজন বাবুর্চি ছিলাম। আমার মনে হল মানুষকে আমি ভালো কিছু খাওয়াবো সেই চাওয়া থেকেই সাত-আট বছর পূর্বে আমার এই ব্যবসা শুরু। আমার এই ব্যবসায় আমি এবং আমার স্ত্রী দুজন মিলে কাজ করছি। আমার স্ত্রী আমাকে প্রচুর পরিমাণে সহযোগিতা করছে। আসলে নিহারি ও হালিমের দোকান বর্তমানে অলিগলি সব জায়গাতেই আছে কিন্তু আমার এখানে যে খাবারটা সুস্বাদু ও পরিবেশন করা হয় সুন্দর পরিবেশে এবং কোন প্রকার ভেজাল মেশানো হয় না। তাই অনেক দূর দূরান্ত থেকে লোক আমার এখানে এসে ভিড় জমায়। কোনাবাড়ী, জয়দেবপুর, সফিপুর, আশুলিয়া, সাভার, মির্জাপুর, ধামরাই ও টাঙ্গাইল এসব এলাকা থেকে আমার এখানে লোক আসে এবং অন্যান্য দুরের জেলা থেকেও অনেক লোকজন আসে। আমার এখানে প্রচুর পরিমাণে ফোনে অর্ডার আসে আমার এখান থেকে এখন অনেক পার্সেলও দেওয়া হচ্ছে। শাহীন স্কুলের মত বড় প্রতিষ্ঠান থেকেও আমার এখানে পরিচালকসহ বিভিন্ন শিক্ষক-শিক্ষিকাও পরিবার নিয়ে খেতে আসে। শুধু তাই নয় থানার পুলিশ ভাইয়েরা এবং উপজেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও আমার এখানে এসে এই খাবার খেয়ে যায়। এটা আমার অনেক সৌভাগ্যের বিষয়।
বর্তমানে আজিজের নেহারি-হালিমের সুনাম গাজীপুরের বাহিরেও ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য তাই ভোজনরসিকদের চাহিদার কথা চিন্তা করেই নিজ গ্রামের বাড়ির পাশেই তিনি টিউন সেটের একটি রেস্টুরেন্টের দোকান গড়ে তুলেছেন।
প্রতিদিনই আজিজের সুস্বাদু গরুর নেহারি ও হালিমের স্বাদ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভোজনরসিকরা।
এ দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের রতনপুর থেকে এসেছেন সালমা আক্তার। তিনি বলেন, আমি কখনো নেহারি খায়নি। প্রথম বার আজিজ মামার নেহারির কথা শোনে এসেছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে, অসাধারণ ও দারুণ মজাদার খাবার। তিনি আরও বলেন, আজিজ মামার নেহারির কথা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।
আজিজ মামা আরও বলেন, বর্তমানে তার দোকানের নেহারির চাহিদা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রচুর পরিমাণে ফোনে অর্ডার আসায় এখান থেকে এখন অনেক পার্সেলও দেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে এসব সুস্বাদু খাবার বিক্রির কাজ। তবে এই খাবারটি পরিবেশন করার পূর্বে খাবার প্রস্তুতির অনেক কাজ থাকে। সেই কাজটি বাড়ি থেকে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তার স্ত্রী এবং দোকানে থাকা তিন কর্মচারী মিলে করে দিচ্ছেন।